ধর্ষণকাণ্ড৷ প্রতিবাদে সারা দেশ উত্তাল৷ ক্যাম্পাস ছেড়ে রাজপথে পড়ুয়ারা৷ একদিকে হূদয় বলছে , সব ছেড়ে বিক্ষোভে সামিল হতে৷ আর সাবধানী মনটা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে সিলেবাসটা শেষ না করলে সেমেস্টারটাই মাটি ! তাহলে উপায় ? পথের হদিশ দিলেন শাহনওয়াজ আলি রায়হান
গেলে কম করে তিন ঘন্টা সময় ‘নষ্ট ’৷
ক্লাসের একগাদা পড়া ফেলে পদযাত্রায় সামিল হওয়াটা কি ঠিক হবে ?
ডেঙ্গির জন্য পুরো দু-দু’টি সন্তাহ বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছে৷ পড়াশোনা তেমন কিছুই
হয়নি৷ কলেজে ফিরে বোঝা গেল অনেটাই পিছিয়ে৷ তবে কি গান্ধীমূর্তির সামনে বেলা দুটোয়
জমায়েতে সামিল হয়ে আর লাভ নেই ? অথচ , এই কয়েকদিন নিয়ম করে চোখ ছিল নিউজ
চ্যানেলগুলোর পর্দায়৷ আত্মিক সমর্থন ছিল ধর্ষণের অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে৷
গত কয়েকদিনের ধর্ষণ আর তার প্রতিবাদ সংক্রান্ত রিপোর্টিংগুলোর পেপার -কাটিং
ইঞ্জিনিয়ারিং -এর ছাত্র দেবব্রত ওরফে দেবু রেখে দিয়েছে ফাইলে৷ পড়তে পড়তে বারবার মন
চলে যায় অন্যদিকে৷ আনমনে একাকী প্রশ্ন---প্রবৃত্তিকে এত নীচে কী করে নামাতে পারে
একজন মানুষ ? পশুদেরও লজ্জা দেবে ! এই শহরেও তো একটা প্রতিবাদ হওয়া উচিত্৷ এমন সময়
রামিজের এসএমএস --- দিল্লি ধর্ষণকান্ডের প্রতিবাদে আমরা আসছে রোববার পথে নামছি৷
আসবি ? কিন্ত্ত , সেদিন যে আমার সারাদিন পড়া …৷ রিপ্লাইটা রাইট -মেসেজে টাইপ করেও
আর পাঠায়নি৷ সেদিন থেকেই ধন্ধে , যাব ? নাকি যাব না ? প্রতিবাদ -বিক্ষোভে সামিল
হওয়ার সময় ভবিষ্যতে অনেক আসবে৷ কিন্ত্ত সেমিস্টার -টা খারাপ হলে পস্তানোর অন্ত
থাকবে না৷
লাভ -লোকসানের অঙ্ক কষতে গিয়ে স্বার্থপর হয়ে পড়াও পছন্দ নয় দেবুর৷
ছাত্র হিসেবে পড়াশোনায় বরাবরই সিরিয়াস৷ ছোটবেলা থেকেই যথেষ্ট সংবেদনশীল৷
প্রতিবেশীর নাতির ‘ও নেগেটিভ ’ রক্ত জোগাড় করা থেকে কাজের মাসির মেয়ের বিয়ের জন্য
টাকা তোলা - স্কুলছাত্র দেবুর উদ্যম ছিল চোখে পড়ার মতো৷ ছোটতে এক প্রবন্ধ
প্রতিযোগিতায় জীবনের লক্ষ্য লিখেছিল রাজনীতিবিদ হওয়া৷ কেন ? রাজনীতি করলে সমাজ
পুনর্গঠন থেকে রাষ্ট্রনির্মাণ - সবেই সামিল থাকা যাবে৷ শিশুমন তখন কি আর বুঝতো
আজকাল লোকে কেন রাজনীতিতে যায় ! অন্য বন্ধুরা আবার ‘পলিটিক্স ’ শব্দটা শুনলেই নাক
সিটকাতো৷ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়ে দেবু ছাত্র -রাজনীতিতে শামিলও হতে চেয়েছিল৷
তিন দিনেই মোহভঙ্গ৷ কোথায় ছাত্র -সংগঠনগুলির আদর্শ কর্মসূচি ? দলমত নির্বিশেষে
ভ্রাতৃত্ব? মতাদর্শগত হোক বা ইস্যুভিত্তিক - খুঁজেও জনাতিনেক ছাত্র -ছাত্রীও পায়নি
সে ডিবেট সোসাইটি গড়ে তোলার৷ ছাত্রভর্তিকে কেন্দ্র করে ছাত্রসংগঠনগুলির মধ্যে যে
পেশী আস্ফালন সে প্রত্যক্ষ করেছে , তা দেখে কি আর ক্যাম্পাস পলিটিক্সে থাকা যায় ?
কি হবে আর পদযাত্রায় সামিল হয়ে ? ওই একই ছেলেমেয়েরা তো থাকবে , যারা প্রয়োজন পড়লে
প্রিন্সিপাল স্যারের কলার ধরে টেনে হিচঁড়ে তাঁকে জনসমক্ষে আনতে পারে৷ যারা ইউনিয়ন
দখলের স্বার্থে সহপাঠীর চোখে আঘাত করতে দ্বিধা করে না !তাছাড়া পড়াও তো আর কম জমে
নেই৷
কিন্ত্ত , ডিস্টিংশন , ক্যাম্পাসিং , ব্র্যান্ডেড কার , নিউটাউনে
ফ্ল্যাট ---এই সরলরেখাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে আগামীর চাওয়াপাওয়াগুলো ? বাইরের ডাকে
সাড়া দিয়ে অন্তরের জগতটা উচ্ছন্নে যাওয়া সমাজটার জন্য সংবেদনশীল হতে গেলেই ‘পড়া
আছে ’-র ট্র্যাঙ্কুলাইজার দিয়ে কেরিয়ারে ফোকাস ? তবে তো আর আই সি এস -এ চতুর্থ হয়ে
কেউ দেশকে স্বাধীন করার তাগিদে নেতাজি হতে যাবে না৷ যে জগত্ অসততায় ভরে উঠছে , তা
থেকে বিবেকবানরা নিজেদের নানা বাহানায় দূরে রাখলে সমস্যা কি বাড়বে , না কমবে ?
মাল্টিন্যাশনালের প্যাকেজ যতই আকর্ষণীয় হোক , ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধে উঠে কেরিয়ার
গঠন করতে না পারলে অকালে মারা যাবে বুকের ভেতরের সংবেদনশীল মনটা৷ তখন সমাজ যতই
জাহান্নামে যাক , কোন আকুতি তৈরি হবে না মনে৷ নাহ , বেলা বাড়ছে৷ রাত জেগে পড়ে
নেওয়া যাবে৷ এখন জলদি স্নান , খাওয়া -দাওয়া করে গান্ধীমূর্তির দিকেই যাওয়া যাক৷
পরের স্টুডেন্ট ’স ইউনিয়ান নির্বাচনে নির্দল হলেও প্রার্থী৷
হার -জিত বড় না , ভেতরের ডাকটায় সাড়া দিতে না পারলে কীসের কী ?৷Source: Ei Samay
0 comments:
Post a Comment